সরেজমিন রাতের ঢাকা: পুলিশের তল্লাশি, টহল কাগজেই
সরেজমিন রাতের ঢাকা: পুলিশের তল্লাশি, টহল কাগজেই
রাতে ঢাকার রাস্তায় পুলিশ যেন অমাবস্যার চাঁদ। তাদের তল্লাশিচৌকি ও টহল দল কাগজে-কলমে রয়েছে, তবে সড়কে দেখা যায় খুবই কম। ওদিকে ছিনতাইয়ের আতঙ্কে বাস করছেন নগরবাসী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি বিভাগ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো তথ্য বলছে, রাজধানীতে দিন ও রাত মিলিয়ে এক দিনে পুলিশের অন্তত ৫০০ থেকে ৫১০টি টহল দল কাজ করে। এর মধ্যে রাতে টহল দল থাকে অন্তত ২৫০টি। টহল দলগুলো এক দিনে ১২০টির (দিন ও রাত) মতো তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) পরিচালনা করে। বেশি পরিচালনা করা হয় রাতে।
আসলেই তল্লাশিচৌকি ও টহল দল সড়কে থাকে কি না, তা দেখতে ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি এবং গত শুক্রবার রাতে ঢাকার অন্তত ৭০ কিলোমিটার সড়ক ঘুরেছেন প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ও একজন ফটোসাংবাদিক। জায়গাগুলো হলো বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, সংসদ ভবনের দুই পাশ, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, হাতিরঝিল, মগবাজার, মধুবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাব। সড়কগুলো ঘোরা হয়েছে রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও ফটোসাংবাদিক যে সময়ে সংশ্লিষ্ট সড়ক দিয়ে গেছেন, সেই সময়ে শুধু একটি জায়গায় (বাসাবো) টহল পুলিশ দেখা গেছে। শুধু গুলশানে প্রবেশের ক্ষেত্রে দুটি তল্লাশিচৌকি বা চেকপোস্টের পার্শ্ববর্তী পুলিশ বক্সে পুলিশ সদস্যের অবস্থান করতে দেখা গেছে। অথচ তাঁদের সড়কে অবস্থান নিয়ে তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করার কথা। দুই জায়গায় (গুলশান ও মোহাম্মদপুর) পুলিশের দুটি টহল গাড়ি থামানো অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু সেই গাড়িতে বা আশপাশে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও বলেছেন, রাতে ঢাকার সড়কে পুলিশের উপস্থিতি অনেক কম দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে ২১ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় কুপিয়ে জখম করে দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এদিন রাত পৌনে ১২টায় বাড্ডায় দুজনকে কুপিয়ে টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে রাত পৌনে ৯টায় গুলশানে মানি এক্সচেঞ্জ (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়) ব্যবসায়ীসহ দুজনকে কুপিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগে সোনা ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭০ ভরি সোনা ও ৪ লাখ টাকা লুট করার ঘটনা ঘটে। তিন ঘটনাতেই অপরাধীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।
রাজধানীর গাবতলীর বাসিন্দা আলম হোসেন প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেলে পুরান ঢাকার নবাবপুরের দোকানে যান। ফেরেন রাতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মধ্যে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ কারণে খুব সকালে না বেরিয়ে একটু দেরি করে বের হন। আর সন্ধ্যার পরপরই ফিরে আসেন।
১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় প্রথম আলোর প্রতিবেদক রাজধানীর বিজয় সরণি মোড় থেকে তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মহাখালী, কাকলি মোড় হয়ে বনানী ১১ নম্বর সড়কের মুখ পর্যন্ত যান। কোথাও পুলিশের তল্লাশিচৌকি বা টহল দল দেখা যায়নি। বনানী ১১ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশের প্রবেশমুখে রাত সাড়ে ১২টার কিছু পরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি তল্লাশিচৌকি রয়েছে। তবে কোনো পুলিশ নেই। পাশে থাকা পুলিশ বক্সটি তখন ছিল তালাবদ্ধ।
এরপর বনানী ১১ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে অর্থাৎ বনানী ১১ নম্বর সড়কের সেতুর মুখে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে গুলশান আজাদ মসজিদ হয়ে ঘুরে (ইউটার্ন) শুটিং ক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার পথে পুলিশের কোনো টহল বা তল্লাশিচৌকি দেখা যায়নি। তবে আজাদ মসজিদের সামনে তখন পুলিশের একটি খালি গাড়ি দেখা যায়।
শুটিং ক্লাবের বিপরীতে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বী পার্কের সামনে গুলশানের প্রবেশমুখে একটি স্থায়ী তল্লাশিচৌকি থাকার কথা। কারণ, সেটি কূটনৈতিক এলাকা। তবে রাত পৌনে একটায় (১৯ জানুয়ারি) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ব্যারিকেডগুলো সড়কের দুই পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কে কোনো পুলিশ নেই। পাশে থাকা পুলিশ বক্সে এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) এক সদস্য এবং পুলিশের আরেক সদস্য বসে আছেন।
No comments